কোন কোন শহরে আজ সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেলের দাম

পেট্রোল ও ডিজেলের দাম (Petrol and Diesel Prices) আজ, ১৩ এপ্রিল, অপরিবর্তিত রয়েছে। তেল বিপণন সংস্থাগুলি (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য সংশোধন…

পেট্রোল ও ডিজেলের দাম (Petrol and Diesel Prices) আজ, ১৩ এপ্রিল, অপরিবর্তিত রয়েছে। তেল বিপণন সংস্থাগুলি (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা এবং মুদ্রা বিনিময় হারের উপর নির্ভর করে। এই নিয়মিত আপডেটগুলি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভোক্তাদের জন্য সবচেয়ে সঠিক এবং বর্তমান জ্বালানি মূল্যের তথ্য প্রদান করে। ভারতে জ্বালানি মূল্য ২০২২ সালের মে মাস থেকে স্থিতিশীল রয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার জ্বালানির উপর কর হ্রাস করেছিল। তবে, বেঙ্গালুরুতে ডিজেলের দাম ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটারে ৮৯.০২ টাকা থেকে বেড়ে ৯১.০২ টাকা হয়েছে।

শহরভিত্তিক পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য (১৩ এপ্রিল, ২০২৫)

নীচে ভারতের বিভিন্ন শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য তালিকাভুক্ত করা হলো:

  • নয়া দিল্লি: পেট্রোল – ৯৪.৭২ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮৭.৬২ টাকা/লিটার
  • মুম্বাই: পেট্রোল – ১০৪.২১ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯২.১৫ টাকা/লিটার
  • কলকাতা: পেট্রোল – ১০৩.৯৪ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯০.৭৬ টাকা/লিটার
  • চেন্নাই: পেট্রোল – ১০০.৭৫ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯২.৩৪ টাকা/লিটার
  • আহমেদাবাদ: পেট্রোল – ৯৪.৪৯ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯০.১৭ টাকা/লিটার
  • বেঙ্গালুরু: পেট্রোল – ১০২.৯২ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮৯.০২ টাকা/লিটার
  • হায়দ্রাবাদ: পেট্রোল – ১০৭.৪৬ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯৫.৭০ টাকা/লিটার
  • জয়পুর: পেট্রোল – ১০৪.৭২ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯০.২১ টাকা/লিটার
  • লখনউ: পেট্রোল – ৯৪.৬৯ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮৭.৮০ টাকা/লিটার
  • পুণে: পেট্রোল – ১০৪.০৪ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯০.৫৭ টাকা/লিটার
  • চণ্ডীগড়: পেট্রোল – ৯৪.৩০ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮২.৪৫ টাকা/লিটার
  • ইন্দোর: পেট্রোল – ১০৬.৪৮ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯১.৮৮ টাকা/লিটার
  • পাটনা: পেট্রোল – ১০৫.৫৮ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৯৩.৮০ টাকা/লিটার
  • সুরাট: পেট্রোল – ৯৫.০০ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮৯.০০ টাকা/লিটার
  • নাসিক: পেট্রোল – ৯৫.৫০ টাকা/লিটার, ডিজেল – ৮৯.৫০ টাকা/লিটার

ভারতে জ্বালানি মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে এমন কারণগুলি

ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণগুলি বোঝা ভোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। নীচে প্রধান কারণগুলির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. অপরিশোধিত তেলের মূল্য
অপরিশোধিত তেল পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা ভারতে জ্বালানি মূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামও সাধারণত বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে, তেলের দাম কমলে জ্বালানির দামও হ্রাস পেতে পারে। তবে, সরকারের নীতি এবং করের হার এই প্রভাবকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে।

২. মুদ্রা বিনিময় হার
ভারত তার অপরিশোধিত তেলের বেশিরভাগ আমদানি করে। ফলস্বরূপ, ভারতীয় টাকার তুলনায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার জ্বালানি মূল্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। টাকার মান কমে গেলে আমদানি করা তেলের দাম বেড়ে যায়, যা পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তবে একই পরিমাণ তেল কিনতে ভারতকে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়।

৩. কর ব্যবস্থা
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যের একটি বড় অংশ গঠিত হয় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর থেকে। এর মধ্যে রয়েছে এক্সাইজ ডিউটি, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এবং অন্যান্য স্থানীয় কর। রাজ্যভেদে এই করের হার ভিন্ন হয়, যার ফলে একই দিনে ভিন্ন শহরে জ্বালানির দাম ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বাই বা হায়দ্রাবাদে পেট্রোলের দাম দিল্লি বা চণ্ডীগড়ের তুলনায় বেশি হতে পারে, কারণ মহারাষ্ট্র বা তেলেঙ্গানায় করের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

৪. পরিশোধন ব্যয়
অপরিশোধিত তেলকে পেট্রোল ও ডিজেলে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল। এই পরিশোধন ব্যয় জ্বালানির চূড়ান্ত মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে। পরিশোধন ব্যয় নির্ভর করে অপরিশোধিত তেলের ধরন, পরিশোধনাগারের দক্ষতা এবং প্রযুক্তির উপর। আধুনিক ও দক্ষ পরিশোধনাগারে উৎপাদন ব্যয় কম হতে পারে, যা জ্বালানির দাম কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৫. পরিবহন ও বিতরণ ব্যয়
তেল পরিশোধনাগার থেকে পাম্প পর্যন্ত জ্বালানি পরিবহন এবং বিতরণের জন্যও উল্লেখযোগ্য ব্যয় হয়। শহরের অবস্থান, পরিবহনের দূরত্ব এবং লজিস্টিক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে এই ব্যয় পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, দূরবর্তী এলাকায় জ্বালানির দাম সামান্য বেশি হতে পারে পরিবহন ব্যয়ের কারণে।

সরকারের ভূমিকা

ভারত সরকার জ্বালানি মূল্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্সাইজ ডিউটি, মূল্য নির্ধারণ এবং মূল্য সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে সরকার জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। ২০২২ সালে কর হ্রাসের ফলে জ্বালানির দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে, বিশ্ববাজারে তেলের দামের অস্থিরতা এবং টাকার মানের ওঠানামা ভবিষ্যতে জ্বালানির দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ভারতের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যদিও বর্তমানে দাম স্থিতিশীল রয়েছে, তবুও বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি এবং দেশীয় নীতির উপর নির্ভর করে এটি পরিবর্তিত হতে পারে। ভোক্তাদের জন্য নিয়মিত মূল্য পরীক্ষা করা এবং জ্বালানি ব্যবহারে সচেতনতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তেল বিপণন সংস্থাগুলি প্রতিদিন সকাল ৬টায় দাম আপডেট করে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় পাম্পে যোগাযোগ করা যেতে পারে।